মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

ঈদের পর গ্যাসের দাম বাড়ছে!

ই-কণ্ঠ অনলাইন:: ঈদের ছুটি শেষেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তিনি জানিয়েছেন, দাম বাড়লেও এমনভাবে বাড়ানো হবে যাতে সরকারও বাঁচে জনগণেরও কষ্ট কম হয়। উভয়পক্ষের সমতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা হবে। ঘোষণা দিলেই বুঝতে পারবেন।

বিইআরসির অপর একটি সূত্র জানিয়েছেন, ঈদের আগেই গ্যাসের দাম বাড়াতে অব্যাহত চাপ দিয়ে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ। উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে বলা হয় একদিন আগে দিতে পারলে সরকারের লোকসান কম হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিইআরসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৮ মে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ‍বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর গণশুনানির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। বিদ্যুতের দামের সঙ্গে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ইস্যুটি জড়িত। তাই ১৮ তারিখের আগেই গ্যাসের দর ঘোষণা করতে চায় বিইআরসি। তবে ঈদের পরে ঘোষণা দিলেও কার্যকর হয়তো ১ মে থেকেই করা হতে পারে। অতীতেও এমন নজির রয়েছে, মাসের মধ্যভাগে ঘোষণা দিয়ে পেছন থেকে কার্যকর করার।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্ট অধ্যাপক শামসুল আলম বলেছেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রত্যেকটিই মুনাফায় রয়েছে। বর্তমান অবস্থায় জনগণের বাড়তি দাম দেওয়ার সামর্থ নেই। আর কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছি গ্যাসের দাম ১৬ পয়সা কমানো যায়। করোনার কারণে সংকটকালীন সময় পার করছি, এমন সময়ে ভর্তুকি বাড়ানোর কথা, সেখানে আগের নির্ধারিত ভর্তুকির অর্থই দেওয়া হয় নি। প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা, এখন পর্যন্ত দিয়েছে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা। সরকার আর ভর্তুকি দেবেনা এমন কথা বলেনি। তারপরও বিইআরসি কারিগরি কমিটি অন্যায়ভাবে সেটাকেই (৩ হাজার কোটি) ভিত্তি ধরে ক্যালকুলেট করে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি সুপারিশ করেছে।

তিনি বলেন, সরকার ভাট-ট্যাক্সসহ নানাভাবে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কোন কোম্পানি কত ডিভিডেন্ট দিবে সেই সিদ্ধান্তও চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা মুনাফা তুলে দিচ্ছে আর কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে গ্রাহকের কাছে টাকা চাইছে। মালিক হিসেবে সরকারের দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করা। কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিতরণ মার্জিন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

কোম্পানিগুলো বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধির আবেদন করলেও, বিইআরসি কারিগরি কমিটির মতামতে বলেছে ইউনিট (ঘনমিটার) প্রতি বিদ্যমান ২৫ পয়সা চার্জ কোন কোম্পানির প্রয়োজনীয়তা নেই। ৬ বিতরণ কোম্পানির মধ্যে শুধুমাত্র কর্নফুলী ছাড়া অন্যদের বিতরণ মার্জিন বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল গণশুনানিতে বলেছিলেন, গ্যাস খাতের সব সংস্থার কাছে ১২ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। সাধারণত মানুষ দুর্যোগে পড়লে শেষ সঞ্চয় ব্যবহার করে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। আবার বিতরণ কোম্পানির মালিক সরকার, তারা কেনো প্রস্তাব এনেছে সরকারের সিদ্ধান্ত কিনা, তাদের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিকতা নিশ্চিত করেই কমিশন আদেশ দেবে। হুমজিক্যালি কোন সিদ্ধান্ত দেবে না কমিশন।

২১ মার্চ থেকে টানা ৪ দিনব্যাপী গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে অংশ নিয়ে চরম তোপের মুখে স্বীকার করেন দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব তাদের আগ্রহে হয় নি। পেট্রোবাংলার নির্দেশে ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলা বলেছে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে স্পর্ট মার্কেট থেকে চড়া দরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। তাই দাম বাড়াতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার হিসেব মতে সেই স্পর্ট মার্কেটের গ্যাসের পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। সামান্য পরিমাণ গ্যাসের দাম বেড়েছে বলে ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে ভোক্তারা।

তিতাস ও বাখারাবাদ জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ডিভিডেন্ট দিতে গিয়ে তাদের সংকট তৈরি হচ্ছে। সময়ে সময়ে পেট্রোবাংলার অনেক আদেশ কোম্পানির স্বার্থে হচ্ছে না। তারপরও তারা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে সংকটে পড়তে হচ্ছে।

ক্যাব জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দর বিরাজ করছে। এই দাম ভিত্তি ধরে বাড়ালে তার প্রতিঘাত অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। পরে দাম স্বাভাবিক হলে যদি দাম কমানো হয়, ভোক্তারা সেই সুবিধা পাবেন না। অতীতে দেখা গেছে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে কিন্তু গাড়িভাড়া কমেনি। তাই আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com